কতটুকু সফল হয়েছিলো মানব জিনোম প্রকল্প?


লিখেছেন

লেখাটি বিভাগে প্রকাশিত

১৯৫৩ সালে ডিএনএর দ্বিসূত্রক গঠন আবিষ্কারের পঞ্চাশ বছর পর জীবনবিজ্ঞানে আলোড়ন তোলে এক বিশিষ্ট ঘটনা। সেসময় সমাপ্ত হয় মানব জিনোম প্রকল্প (Human Genome Project)। এর লক্ষ্য ছিলো, যে তিন বিলিয়ন বেস পেয়ার দিয়ে মানুষের জিনোম গঠিত, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, তাকে আগামাথা ‘পড়ে’ ফেলা। আমরা জানি A,T,C,G এই চারটি ‘অক্ষর’ দিয়ে জীবনের তথ্য ডিএনএ’তে তথা জিনোমে ‘লেখা’ থাকে। এই পুরো তথ্যকে যান্ত্রিক উপায়ে পড়ে ফেলা’কে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলে জিনোম সিকোয়েন্সিং।

সেসময় বহু বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদ পর্যন্ত এই প্রকল্পকে ঘিরে বেশ বড় বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। যেমন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন আশা ব্যক্ত করেছিলেন চিকিৎসা ব্যবস্থায় দ্রুতই বড়সড় বিপ্লব ঘটে যাবে। ২০১৬ সাল নাগাদ সকলে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ডের মতো একটা জিনোম কার্ড ওয়ালেটে করে ঘুরবে,যেখানে তাদের পুরো জিনোম ডিজিটাল পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ থাকবে। আমরা যখন হাসপাতালে যাবো,তখন ডাক্তার ওই কার্ড দেখে আমাদের রোগব্যাধির নিশানা আরো ভালো করে ধরতে পারবেন। অনেক হাসপাতালেই ‘জিনোমিক ঔষধ’ বিভাগ খুঁজে পাওয়া যাবে। সেখানে আপনার নিজস্ব জিনগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ‘থেরাপি’ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু আজকে, ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে যদি এসব ভাবতে বসি, তাহলে মনে হয় এই দাবিগুলো অতিরঞ্জন বৈ কিছু নয়!

মানব ডিএনএ’তে চারটি ‘বেস’ বা ক্ষার থাকে: A,T,C,G; ছবি: Healthline.com

মানব জিনোম প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯০ সালের দিকে। ২০০০ সনে মানুষের জিন-বিন্যাসের প্রথম খসড়া প্রকাশিত হয় এবং তার তিন বছর পর প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়। বহু দেশের বিজ্ঞানীরা এই কর্মযজ্ঞে অংশ নিয়েছিলেন। অস্বীকার করার উপায় নেই, মানুষের গোটা জিনোম প্রকাশ করতে পারা ছিলো এক বিরাট ঐতিহাসিক ঘটনা। কিন্তু এখানে থেকে যেসব প্রত্যাশা ছিলো,তার অনেকটাই এতো বছর পরেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। আমরা বুঝতে পেরেছি রোগনাশে ব্যাপক সাহায্য করতে পারে এমন কোনো চাবিকাঠি আমাদের জিনোমের মধ্যে লুকিয়ে নেই। তবে, এরকম প্রতিশ্রুতির কথা এলো কীভাবে?

এর মধ্যে কিছুটা ছিলো, ইংরেজিতে যাকে বলে, ‘উইশফুল থিংকিং’। অনেক বিজ্ঞানী এবং বিশেষত বিজ্ঞান-লেখকেরা এই ভ্রমের শিকার হয়েছিলেন। আবার, ৮০’র দশকের শেষ দিকে বিভিন্ন রোগের সাথে একক জিনের অস্বাভাবিকতার সম্পর্ক নিরূপণ করে কিছু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিলো। এর মধ্যে বাইপোলার ডিজঅর্ডার, স্কিৎজোফ্রেনিয়া, অ্যালকোহলিযম ইত্যাদি’ও ছিলো। যদি এসব সমস্যার কারণ একটি জিনেই নিহিত থাকে,তবে ওই জিনটাকে ঠিকঠাক বদলে দিলেই তো হলো,না-কি?

দুঃখজনকভাবে নতুন গবেষণায় ওইসব প্রবন্ধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফলাফল পাওয়া গেলো না। আমরা জানলাম, কেবল একটা জিনের অস্বাভাবিকতা থেকে হয় এমন রোগের সংখ্যাই নগন্য। বেশিরভাগ রোগের জন্য বরং উল্টোটা সত্য। যেসব বড় বড় রোগের কথা আমরা দৈনন্দিন জীবনে শুনি, ধরা যাক ডায়াবেটিস কিংবা আগে বলা মানসিক রোগগুলো, এদের ওপর জেনেটিক্সের প্রভাব আছে বটে। কিন্তু সে প্রভাব বহু জিনের সম্মিলিত,জটিল আন্তঃক্রিয়ার ফলাফল। আর, রোগভেদে জিনের সংখ্যাটা ডজন থেকে শুরু করে শ’খানেকও হতে পারে। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে একটা-দুটো জিনকে টার্গেট করে বা বদলানোর চেষ্টা করাটা বিশেষ কোনো উপকারে আসবে না। কাজটা একে তো ভীষণ জটিল,তথাপি এর ফলাফল ভালো নাও হতে পারে!

ডিএনএ’তে বিশেষ‌ মিউটেশন বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে; ছবি: Live Science

জিন ছাড়া ব্যক্তির জীবনপ্রণালি এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি’ও তার রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাকে বাড়াতে-কমাতে পারে। জিনের প্রভাব জানার আগে অবশ্য মানুষ কেবল ওগুলোকেই একমাত্র রোগের নির্ণায়ক মনে করতো। হান্টিংটন’স ডিজিজ, এনিমিয়া এইসব রোগের জিনগত উৎস নিয়ে গবেষণা করে প্রথম দেখা গেলো এদের কারণ একটা মাত্র জিনে মিউটেশন। কিছু জিনে (যেমন BRCA) নির্দিষ্ট কিছু মিউটেশন নারীদের স্তন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। বিভিন্ন ওষুধ বিশেষ মিউটেশনওয়ালা রোগীর দেহে সাধারণের চেয়ে ভালো কাজ করতে পারে। অনেক ক্যান্সার রোগীর আক্রান্ত দেহকোষের জিনোম সিকোয়েন্সিং করার প্রয়োজন হতে পারে সঠিক চিকিৎসা খুঁজে বের করার জন্য। অর্থাৎ চিকিৎসার কিছু ক্ষেত্রে আসলেই জিন-বিন্যাস জানা জরুরি হয়ে উঠতে পারে।

কিন্তু এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা আগে থেকেই জানেন জিনোমের ঠিক কোথায় খুঁজতে হবে,আর কী খুঁজতে হবে। পুরো ডিএনএটা সিকোয়েন্সিং করে তারপর কী কী মিউটেশন আছে সেটা খুঁজতে বসেন না কেউ। কারণ ডিএনএতে একটা বিশেষ জায়গায় বিশেষ মিউটেশন আছে শুধু এই তথ্যটা জানা বিশেষ কাজের নয়, যতক্ষণ না জানা যাচ্ছে ঐ মিউটেশনের ‘ফাংশন’টা কী। অর্থাৎ এ মিউটেশনের ফলে কী হয়। মজার ব্যাপার, অনেক জিনের নামকরণ করা হয় মিউটেশনজনিত ফলাফলের ভিত্তিতে।

জীবনবিজ্ঞানের নানা শাখার গবেষকেরা বিশেষ বিশেষ মিউটেশনের ফলাফল লিপিবদ্ধ করে চিকিৎসকদের কাজটা সহজ করে দেন। সহজ করে পদ্ধতিটা বলা যাক। ধরে নিই, দুইজন ব্যক্তির মধ্যে একটা বিশেষ সিকোয়েন্সের একটি মাত্র নিউক্লিওটাইডে পার্থক্য পাওয়া গেলো। এতে কিন্তু নির্দিষ্ট করে জানা গেলো না ওই পার্থক্যের ফলে আদৌ কোনো বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয়েছে কী না। জিনোমে দেখে কোনোমতেই বোঝার উপায় নেই কোন অংশের কাজ কী। তার জন্য বিজ্ঞানীদের বিশেষ রকম জটিল পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে হয়। যেমন দেখা যেতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রোটিনগুলো, যাদের কাজের ব্যাপারে আমরা অনেকটাই জানি, তাদের গঠনে মিউটেশনজনিত কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে কী না। অথবা, বিশেষ কোনো রোগ আছে এবং নাই এরকম মানুষের বিশেষ বিশেষ সিকোয়েন্স যত পারা যায় যোগাড় করে বৈপরীত্য খুঁজে বের করা। এভাবে কোনো রোগের জিনগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। মানব জিনোম প্রকল্পের পর মানুষ‌ যখন চিকিৎসাব্যবস্থায় বিপ্লবের স্বপ্ন দেখছিলো, তখন তারা জিনোম সিকোয়েন্স করা আর রোগ-নিরাময়ে একে ব্যবহার করার মাঝের এই অত্যন্ত জটিল, অনিশ্চিত ধাপগুলোর কথা একরকম ভুলেই গেছিলো।

জিনোমকে বহু ক্ষেত্রেই একটা বড়ো বই-এর সাথে তুলনা করা হয়। কিন্তু আদতে জিনোম বইয়ের চেয়েও বেশি‌ কিছু। যেমনটা আগে বলেছি, মানুষের জিনোম তিন বিলিয়ন বেস পেয়ার দিয়ে গঠিত। ধারণা করা হতো এর বেশিরভাগই প্রোটিন উৎপাদনের সংকেত ধারণ করবে। ‘জীবনের কেন্দ্রীয় প্রত্যয়’ (central dogma of life) অনুসারে ‘জীবনের তথ্য’ প্রাথমিকভাবে ডিএনএ’তে ‘লেখা’ থাকে। এই তথ্যকে সাময়িকভাবে বহন করতে ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় ম্যাসেঞ্জার আরএনএ (mRNA)। কোষের রাইবোজোমে আরএনএ-বাহিত এই তথ্য অনুসারে একটার পর একটা অ্যামিনো এসিড জোড়া দিয়ে প্রোটিন তৈরি হয়। আর এই প্রোটিনই সজীব কোষের বেশিরভাগ কাজকর্মের মূলে। সুতরাং প্রোটিন তৈরি করতে পারে এমন কেজো সংকেত আমাদের ডিএনএ জুড়ে থাকবে,এমনটা ভাবা মোটেই অবান্তর ছিলো না।

জিনোম থেকে প্রোটিন তৈরির যাত্রা; ছবি সূত্র: The Science Creative Quarterly

সবিস্ময়ে দেখা গেলো পুরো জিনোমের মাত্র ২% প্রোটিন তৈরির তথ্য ধারণ করে থাকে। বাকি ৯৮% থেকে কোনো প্রোটিন পাওয়া যায় না। এই অংশকে তখন বলা হলো ‘জাঙ্ক ডিএনএ’। কেউ কেউ বললেন জিনোমের ‘ডার্ক ম্যাটার’। ভাবলে হতাশ হতে হয় ‘তথ্যভাণ্ডার’ জিনোম-বইয়ের বেশিরভাগ ‘পৃষ্ঠা’ই হিজিবিজি দিয়ে ভরা!

পরবর্তীতে অবশ্য জানা গেলো প্রোটিন-তৈরির সংকেত না বহন করলেও সেই ডিএনএ একেবারে ‘জাঙ্ক’ কিংবা ফালতু/অকর্মণ্য নাও হতে পারে। যেমন কিছু ডিএনএ সিকোয়েন্স নিজেরা জিন না হলেও অন্য জিনের প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন ‘প্রমোটার’ বলে কিছু অংশ,যা জিনের প্রোটিন-নির্দেশক সিকোয়েন্সের সামনে থাকে। ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ার শুরুতে প্রয়োজনীয় এনজাইমগুলো আগে এখানে যুক্ত হয়,তারপর বাকি অংশ অনুসারে আরএনএ তৈরি করে থাকে। এছাড়াও আছে ‘এনহেন্সার’ সিকোয়েন্স, যা জিনের প্রকাশকে বাড়িয়ে দেয় এবং ‘সাইলেন্সর সিকোয়েন্স’, যা জিনের প্রকাশকে স্তিমিত করে। আবার, ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া একটা ডিএনএ সূত্রের পরিপূরক হিশেবে প্রাথমিকভাবে যে এমআরএনএ তৈরি হয়, সেখানেও কাটাছেঁড়া চলে। ‘ইন্ট্রন’ বলে কিছু অংশ প্রাথমিক গঠনে থাকলেও, পরে এদের বাদ দেওয়া হয়। বাদ দেওয়ার পর বাকি অংশগুলো বিভিন্ন কম্বিনেশনে একে অপরের সাথে জোড়া লেগে চূড়ান্ত এমআরএনএ তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় একই জিন সিকোয়েন্স থেকে কয়েক রকম প্রোটিন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়!

(ছবিটি এটাই সায়েন্স ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া)

কিছু ডিএনএ সিকোয়েন্স আছে, যারা ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়ায় ম্যাসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ (mRNA) তৈরি করে; কিন্তু ট্রান্সলেশন প্রক্রিয়ায় প্রোটিন তৈরিতে অংশগ্রহণ করে না। এরকম অনেক আরএনএ কোষের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক ভূমিকা পালন করে। মজার ব্যাপার, যে রাইবোজোম এমআরএনএ’র সিকোয়েন্স ধরে প্রোটিন তৈরি করে,সে নিজেও ট্রান্সলেশন না হওয়া এক ধরনের আরএনএ (rRNA) দিয়ে তৈরি। আবার, ডিএনএ’র কোনো কোনো অংশের ভূমিকা গাঠনিক প্রকৃতির। যেমন টেলোমিয়ার। ক্রোমোজোমের বাহুগুলোর প্রান্তে এই পুনরাবৃত্তিমূলক সিকোয়েন্স পাওয়া যায়। এটা অনেকটা ‘ক্যাপ’ বা ঢাকনার মতো কাজ করে ক্রোমোজোমের কুণ্ডলীত দশাকে স্থায়ীত্ব দেয়। তবে স্বীকার করতেই হবে, ডিএনএ’র কিছু অংশ আসলেই ‘জাঙ্ক’, এক্কেবারে নিষ্কর্মা। এদের অনেক সময় ‘ছদ্মজিন’ (pseudogene) বলা হয়।

এ তো গেলো কোন জিন কী করতে পারে,তার কথা। কিন্তু সে আসলেই তা করবে কী-না, করলে কখন করবে এর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আছে। ক্রোমোজোমের ত্রিমাত্রিক গঠন জিনের প্রকাশে প্রভাব ফেলে। ডিএনএ যদি খুব বেশি প্যাঁচানো থাকে (একে বলে ‘হেটেরোক্রোমাটিন’),তাহলে ওইসব অঞ্চলের জিনের প্রকাশ কম হবে। আবার প্যাঁচ কিছুটা আলগা হলে (একে বলে ‘ইউক্রোমাটিন’)  তখন প্রয়োজনীয় এনজাইম সহজে কাজ করতে পারবে। এপিজেনেটিক্স বলে জিনতত্ত্বের আধুনিক একটি শাখা আমাদের জানাচ্ছে ডিএনএ সিকোয়েন্সকে অক্ষুণ্ন রেখেও মিথাইল, অ্যাসিটাইল,ইউবিকুইনোন ইত্যাদি রাসায়নিক মূলকের উপস্থিতি জিনের প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

Oplus_131072

এখানে যা যা বলা হলো, তা ডুবন্ত হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আরো নানারকম জটিল প্রক্রিয়া আমাদের জিনোমে অনবরত ঘটে চলেছে,যার অনেকগুলো আমরা এখনো ভালো করে বুঝেও উঠতে পারি নি। তবে আমরা বুঝতে পেরেছি, শুরুতে যেভাবে বলেছিলাম জিনোম মোটেই সেরকম শুধু কিছু অক্ষর পড়ে যাওয়ার ব্যাপার নয়।

এই সামগ্রিক আলোচনার পর আশা করি বোঝা গেছে একজন রোগীর পুরো জিনোম জানাটা চিকিৎসাদানের ক্ষেত্রে (খুব অল্প কিছু ঘটনা ছাড়া) বড়োসড়ো কোনো সহায়ক ব্যাপার নয়। ভবিষ্যতেও সেরকম হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমরা বলেছি বেশিরভাগ রোগে বহু জিনের ছোটো ছোটো প্রভাবের এক সম্মিলিত ভূমিকা থাকে। আবার এই জিনোম, তার নিয়ন্ত্রণ, জিনের প্রকাশ বড়ই জটিল আন্তঃক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। এইজন্যই মানব জিনোম প্রকল্পের জিনোম তথ্য জেনে সব রোগের প্রতিকার বের করে ফেলার প্রতিশ্রুতিটা শেষমেশ দিনের আলো দেখে নি।

তবে এর মানে এই নয় যে মানব জিনোম প্রকল্প পুরোটাই ব্যর্থ হয়েছে। জিনোমের অন্তর্গত জটিলতা এবং রোগের জিনগত প্রভাব নিয়ে যেসব কথা এখানে বলা হলো,তার অনুসন্ধান এবং বোঝার ক্ষেত্রে মানব জিনোম প্রকল্প একটা শক্ত পাটাতন তৈরি করে দিয়েছিলো। আবার এর পথ ধরেই আধুনিক সূক্ষ্মতর সিকোয়েন্সিং কলাকৌশলের উদ্ভব ঘটেছে। শুরুতে যে সিকোয়েন্সিং করতে বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিলো,সময় লেগেছিলো দুই বছর, এখন তা কয়েক হাজার ডলার দিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই করা সম্ভব। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এই যাত্রার পথিকৃৎ ছিলো মানব জিনোম প্রকল্প। এই প্রকল্পের অধীনে যে সিকোয়েন্স শুরুতে প্রকাশিত হয়েছিলো তা ছিলো অল্প কিছু মানুষের ওপর করা। বিভিন্ন ভূগোলের বিভিন্ন পরিবেশের মানুষের জিনোম সিকোয়েন্স করা সম্ভব হয়েছে এখন। এর ফলে মানুষের বিবর্তন,পুরাতন সভ্যতা,আদি মানবগোষ্ঠীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার চিহ্নসহ বিজ্ঞানের আরো নানা ক্ষেত্র উপকৃত হচ্ছে। আর, জিনের বিশেষ মিউটেশন এবং ‘পলিমরফিজম’ বা বহুরূপতা’র সাথে এনিমিয়া’র মতো বিশেষ রোগের সংযোগ উদ্ঘাটনের ব্যাপারটা তো রয়েইছে।

মানব জিনোম প্রকল্প আদতে চিকিৎসকদের চেয়ে ল্যাবে কাজ করা বিজ্ঞানীদেরই বেশি কাজে লেগেছে। অবশ্যই এই দুই দলের মানুষ একেবারে দূর দ্বীপবাসী নন। আবার এদের যোগাযোগ, অন্তত মানব জিনোম প্রকল্পের আদি প্রতিশ্রুতির মতো, এতো সরলও নয় বৈ কী!

তথ্যসূত্র-

লেখাটি 373-বার পড়া হয়েছে।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান? হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার জন্য Hostinger ব্যবহার করুন ৭৫% পর্যন্ত ছাড়ে।

আলোচনা

Leave a Reply

ই-মেইল নিউজলেটার

বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবর সম্পর্কে আপডেট পেতে চান?

আমরা প্রতি মাসে ইমেইল নিউজলেটার পাঠাবো। পাক্ষিক ভিত্তিতে পাঠানো এই নিউজলেটারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন খবরাখবর থাকবে। এছাড়া বিজ্ঞান ব্লগে কি কি লেখা আসলো, কি কি কর্মযজ্ঞ চলছে, সেটার খবরও থাকবে।







Loading